২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার আরব লিগের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। ওই সময় আরব লিগের ২২ সদস্য সিরিয়াকে নিষিদ্ধ করে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে “সম্পর্ক স্বাভাবিক” করতে দেশটিকে আরব লিগের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। তবে আসাদ প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সন্দিহান তারা।
রবিবার (৭ মে) সিরিয়াকে আবার পূর্ণ মর্যাদার সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে ২২ সদস্যের এই রাষ্ট্রীয় জোটটি।
গৃহযুদ্ধের কারণে এক দশকের বেশি সময় আগে সিরিয়ার আরব লিগের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার আরব লিগের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। ওই সময় আরব লিগের ২২ সদস্য সিরিয়াকে নিষিদ্ধ করে। দেশটির ওই সময়ের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সরকারের দমনপীড়নের পর পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। সংঘাতে ৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যান। এ ছাড়া হাজারো মানুষ বাস্তুহারা হয়। ধ্বংস হয় অবকাঠামো। অনেক আরব দেশ দামেস্ক থেকে তাদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।
তবে সম্প্রতি সৌদি আরব ও মিশরসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ উচ্চ পর্যায়ের সফর ও বৈঠকের মাধ্যমে সিরিয়ার সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়।
গত সপ্তাহে সিরিয়াকে আরব লিগে ফিরিয়ে নিতে জর্ডানের উদ্যোগে মিসর, ইরাক, সৌদি আরব ও সিরিয়ার কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠক হয়। ওই সময় আশ্বাস দেওয়া হয়, সংস্থার শীর্ষ বৈঠকের আগেই সিরিয়াকে আরব লিগে ফিরিয়ে আনা হবে।
যদিও কাতারের মত কিছু দেশ এখনো সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক করতে আপত্তি জানিয়ে আসছে। সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল এখন আসাদ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়নি।
কাতার আশা করছে, আঞ্চলিক ঐকমত্যের মাধ্যমে আসাদ তার দেশের সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন।
মার্কিন প্রশাসনও আরব লিগের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “সিরিয়ায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে আরব সহযোগীদের লক্ষ্য সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র একমত হলেও সে বিষয়ে বাশার আল আসাদের আন্তরিকতা নিয়ে ওয়াশিংটনের সংশয় দূর হচ্ছে না। ফলে এই মুহূর্তে আরব লিগে সিরিয়াকে ফেরানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। সিরিয়ার বিরোধী জোটও আরব লিগের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে।”
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানের উদ্যোগ নিতে চায় আরব লিগ। সেইসঙ্গে যুদ্ধের ফলে প্রতিবেশী দেশে সিরিয়ার শরণার্থী ও গোটা অঞ্চলজুড়ে মাদক চোরাচালানের সমস্যাও বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে চায় জোটটি।
আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গাইত কায়রোয় বলেন, “সিরিয়াকে সদস্য হিসেবে পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ সে দেশের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নয়। প্রত্যেক দেশকে সে বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জর্ডান, সৌদি আরব, ইরাক, লেবানন, মিশর ও আরব লিগ মন্ত্রিপর্যায়ের এক গোষ্ঠী গঠন করে সিরিয়া সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেবে বলে আরব লিগ জানিয়েছে। সিরিয়ায় ত্রাণ সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও এই রাষ্ট্রজোট সহায়তা করবে।”
সিরিয়া আরব দেশগুলোর উদ্দেশ্যে “পারস্পরিক শ্রদ্ধা” দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া আরব লিগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
আরব দেশগুলো আগামী ১৯ মে রিয়াদে আরব লিগের সম্মেলনে বাশার আল আসাদ উপস্থিত থাকবেন কি-না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আসাদকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।