বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা শক্তি আরও বাড়িয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোচ্ছে।
এটি এরই মধ্যে চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বলে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ শনিবার জানিয়েছে। অর্থাৎ সুপার সাইক্লোনের ঠিক আগের ধাপে পরিণত হয়েছে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়টি।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটারে উঠছে।
শনিবার প্রথম প্রহরে ঝড়টি বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং মিয়ানমারের সিত্তে উপকূল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে ছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি ওই সময়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছিল। এর গতিপথ আগের মতোই কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের দিকেই রয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার আগে আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। তবে যখন উপকূল অতিক্রম করবে, তখন এর শক্তি কিছুটা কমে আসবে।
ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বাতাসের তীব্রতা নিয়ে রোববার দুপুর নাগাদ ঝড়টির উপকূলে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টির সবচেয়ে বেশি প্রভাব কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সেজন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৬টায় মোখা কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এজন্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ভোলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলের নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ভোলার উপকূলে জোয়ারের পানি উঠতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উঁচুতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। অতি বর্ষণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে।
বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়।
তখন থেকে এর আরও ঘনীভূত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। মঙ্গলবার এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরে নিম্নচাপে পরিণত হয়। বুধবার এটি গভীর নিম্নচাপ হয়েই সাগরে ছিল। বৃহস্পতিবার তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। একই দিনে তা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
এসকাপের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এটি ইয়েমেনের দেওয়া ‘মোখা’ নাম পায়।